ব্যায়ামের বিকল্প নেই
ঢাকার ফার্মগেটে হেলথ পয়েন্ট জিমের প্রধান প্রশিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বললেন, ঈদের পরে সবার শরীরেই কমবেশি বাড়তি মেদ জমে। সে ক্ষেত্রে ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। ওয়ার্মআপ করে পেটের ও কোমরের কিছু ব্যায়াম করা চাই। ওয়ার্মআপের জন্য আর্মস ফ্রন্ট রাইজ, সাইড রাইজ, লেগ স্ট্রেচ, লেগ ফ্রন্ট রাইজ, ব্যাক রাইজ, সাইড বেন্ড ইত্যাদি খালি হাতের ব্যায়াম ১০ বার করে করতে পারেন।
পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক তানজিনা চৌধুরী বলেন, শরীরে অতিরিক্ত চর্বির প্রকোপ পেট ও কোমরে বেশি দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে ঈদের পরে ক্যালরিপোড়ানোর প্রতি বেশি মনোযোগ দিন। হাঁটা ও জগিংই এর সবচেয়ে ভালো উপায়। বাইরে বা ঘরে ট্রেডমিলে হাঁটতে পারেন। একই সঙ্গে জিমে গিয়ে বাইক, ক্রস ট্রেইনার ও স্টেপার যন্ত্রে ব্যায়াম করুন। পেট ও কোমরের জন্য ক্রাঞ্চেস করতে পারেন। অথবা শুয়ে পা ৩০ ডিগ্রি পরিমাণ তুলে সোজা ধরে রাখুন। তারপর বৃত্তাকারে ঘোরানোর চেষ্টা করুন। শুয়ে নিতম্ব ওপর-নিচ ওঠানো-নামানো করলেও পেটের চর্বি কমবে। এক কেজির দুটি ডাম্বল দুই হাতে নিয়ে সাইড বেন্ড করলে কোমরের গঠন সুন্দর হবে। অ্যারোবিকস করলে সবচেয়ে ভালো হয়। বাজারে এক ঘণ্টার প্রাথমিক পর্যায়ের অ্যারোবিকস সিডি কিনতে পাওয়া যায়। তা দেখে যে কেউ অ্যারোবিকস শিখতে পারেন। খাওয়ার আধঘণ্টা আগে ও পরে এক ঘণ্টা করে হাঁটা খুব কাজে আসবে। যেকোনো সময় ব্যায়াম করতে পারেন। সকালে করলেই ভালো। রাতের খাবারের এক ঘণ্টা পরেও ব্যায়াম করা যায়। যখন যে ব্যায়ামই করুন, লক্ষ্য থাকুক ক্যালরি পোড়ানোর।
হালকা খাবার খান
রান্নাবিদ নাসরিন আলম বলেন, ঈদের পরে মাংস কম খাওয়াই ভালো। খাবার যত হালকা হবে ক্যালোরি তত বেশি কমাতে পারবেন। বারবার চিনি ছাড়া লেবু চা, সালাদ ও ফলমূল খাবেন। পাতে সবজি, মাছের ঝোল ও পাতলা ডালের পরিমাণ বাড়ান। ফল বা সবজির সালাদে টকদই বা মাল্টার রস ব্যবহার করুন। হরেক সবজি মিলিয়ে মসলাহীন তরকারি রান্না করুন। সামান্য তেল, আধা চামচ আদা ও লবণ দিতে পারেন।
শসা ওজন কমাতে সহায়ক। লেবু, লবণ, পুদিনা ও ধনেপাতা মেখে শসার সালাদ খেতে পারেন। শসা মুগডাল দিয়ে রান্না করলেও ভালো লাগে। খেতে পারেন টমেটো। বিট লবণ দিয়ে কাঁচা টমেটোর স্বাদই আলাদা। ভাত, রুটি যা-ই খান, পরিমাণ কমাতে হবে। যতবার খিদে লাগবে ততবার খান কিন্তু কম করে। ফল আর সবজি খেয়েই পেট ভরানোর চেষ্টা করুন। নিয়ম মেনে বারবার এসব খেলে ওজন কমে যাবে।
চাই পরিপূর্ণ খাদ্যতালিকা
পুষ্টিবিদ এস এন শম্পা বলেন, অতিরিক্ত ওজন মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য নষ্ট করে। আত্মবিশ্বাস কমিয়ে মানসিক চাপ বাড়ায়। শুধু ইচ্ছাশক্তি থাকলেই আপনি এই সমস্যা কাটাতে পারেন।
ঈদ যেমন আনন্দের, নিয়ন্ত্রণহীন খাবারদাবার তেমনি বিপদের। অতিরিক্ত ওজন মূলত ওবেসিটি নামের একটি রোগ। এটি আবার অন্যান্য রোগের জন্ম দেয়। তাই কিডনি রোগী, হূদেরাগী ও ডায়াবেটিক রোগীদের ঈদের পরই অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য সচেতন হওয়া চাই। মানতে হবে ডায়েট চার্ট। আপনার বয়স, ওজন, উচ্চতা, শারীরিক অবস্থাভেদে স্বল্প ব্যয়ে পুষ্টিবিদ অনুমোদিত ডায়েট চার্ট করা সম্ভব। পুষ্টিবিদ শম্পা আরও বলেন, ডায়াবেটিক রোগীকে সব ধরনের চর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে। কিডনি রোগীদের রক্তে ক্রিয়েটেনিনের মাত্রার ওপর প্রোটিনের গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ধারিত হয়। ক্রিয়েটেনিনের মাত্রা বিবেচনা করে প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ ৩০ গ্রাম থেকে ৫০ গ্রাম হতে পারে।
ওবেসিটির সঙ্গে হূদেরাগের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই দুই ধরনের রোগীরা পশুর হাড়ে জড়ানো মাংস, রানের মাংস, গোল চাকা মাংস, কলিজা, মগজ ও পায়া খাবেন না।
সবশেষে এস এন শম্পা বলেন, খাবার তালিকায় টকদই, লেবু চা, শসা ও কাঁচা পেঁপের পরিমাণ বাড়ালে যে কেউ অতিরিক্ত ওজন থেকে মুক্তি পাবেন।
তাই, খাবারের জন্য বাঁচা নয়, বাঁচার জন্য খান।
সুস্থ থাকুন। PROTHOM-ALO
0 comments:
Post a Comment