বকুল ফুলের গাছ সারা দেশেই কমবেশি চোখে পড়ে। বাড়ির আশপাশে এবং অফিস-কাচারি, স্কুল-কলেজ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে ঘন পাতায় সন্নিবেশিত বকুলগাছের দেখা মেলে। সুগন্ধি ফুলের জন্যই মূলত বকুলের জনপ্রিয়তা, তবে এর ঔষধিগুণ ও দারুমূল্যও কম নয়। ভোলা শহরের বসতবাড়ি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আশপাশে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বকুলগাছ রোপণ করা হয়েছে। ফুলও এসেছে এসব গাছে। এখন অবশ্য প্রস্ফুটন কমেছে। ফল এসেছে প্রচুর। ভোলা শহরের একটি স্থানের নাম ‘বকুলতলা’। সেখানে আছে বিশাল মসজিদ, নাম ‘বকুলতলা জামে মসজিদ’। বকুল গাছগুলো ভরে উঠেছে বকুল ফলে। এই ফল ঔষধিগুণে অনন্য। সবুজের ফাঁকে হলদে-লাল বকুল ফল দেখতেও অসাধারণ। শুধু এটিই নয়, শহরের অন্য বকুলগাছগুলোও এখন অজস্র ফলের সমারোহে অন্য এক শোভা মেলে ধরেছে।
ভোলা উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ জানালেন বকুল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এর বৈজ্ঞানিক নাম Mimusops elengi Linn। বকুলের কাঠ শক্ত। এটি বড় চিরহরিৎ বৃক্ষ। গাছ ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, ডালপালা প্রসারিত ও ঘন উজ্জ্বল সবুজ পত্র। ফুল সাদা, গন্ধযুক্ত। বাকল ধূসর বর্ণের অমসৃণ, ফাটলযুক্ত। পাকা ফল লালচে, খেতে মিষ্টি। গ্রীষ্ম থেকে শরৎকাল পর্যন্ত এর ফুল ফোটে। বীজ থেকে বংশবিস্তার হয়। প্রতি কেজিতে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার পর্যন্ত বীজ হয়।
বকুলের রয়েছে উন্নত ঔষধিগুণ। এর ফুলের তেল থেকে সুগন্ধি এবং বীজের তেল রান্নার কাজে, ব্যথানাশক মালিশ ও রঙের মিশ্রণে ব্যবহার করা হয়। বকুলগাছের বাকল দাঁতের ব্যথা নিরাময়ে এবং কাঁচা ছালের ক্বাথ কোষ্টকাঠিন্য নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। কাঁচা বকুল ফল চিবিয়ে খেলে দাঁতের গোড়া শক্ত হয়। প্রতিদিন সকালে কয়েকটি বকুল ফলের শাঁস চিবিয়ে খেলে পুরোনো আমাশয় রোগ ভালো হয়। ভোলা বন বিভাগ উপকারী এ ফল ও ফুলের গাছটির বিস্তার ঘটানোর জন্য এরই মধ্যে আড়াই হাজার চারা বিতরণ করেছে। এ ছাড়া বন বিভাগের হিসাবে ভোলায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বকুলগাছ আছে।
বাড়ির আঙিনায় একটি বকুলগাছ লাগালে ফুলের গন্ধে মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ফলের সুফলও পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে।
0 comments:
Post a Comment