"টেকি" খুবই ছোট এবং বাংলাদেশে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ । আমাদের দেশে অনেকেই দুই-একটি টেকনোলজি বিষয়ক ব্লগপোষ্ট লিখেই টেকি হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় । আবার অনেকে CSEতে অনার্স মাষ্টার্স করে সারা জীবন প্রযুক্তি নিয়ে পড়ে থাকলেও সেই স্থানে পৌছাতে পারে না।
এই পোষ্টে বাংলাদেশের সেরা ১০জন টেক-প্রফেশনালদের নিয়ে আলোচনা করা হবে । বলাবাহুল্য সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু করে দেখিয়েছেন । এরা সবাই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ । মনে হতে পারে এই লিস্টটি ঠিক হয়নি, একটু অগোছালো হয়ে গেছে । আসলে এতজন শ্রেষ্ট টেকি আছে যে বাছাই করা যে কত কষ্ট তা নিজে বাছাই শুরু না করলে বোঝা যাবে না । চেষ্টা করা হয়েছে এতে সবক্ষেত্রের একটি ব্যালেন্স রাখতে ।
এই পোষ্টটি লেখার পিছের অন্যতম কারণ, বাংলাদেশের টেক জগতে এক বিরাট অস্থিরতা বিরাজ করছে । কেউ ব্লগিং, কেউ ফ্রিল্যান্সিং, কেউ কোডিং, কেউবা শুধু PTC নিয়েই পড়ে আছে। এই পোষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু মানুষকে বিরাট এই প্রজন্মের আইডল বা আনুসরণীয় পাত্র হিসেবে দাড় করানো । হতে পারে তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেকেই খুজে পাবে আলোর দিশা । লিস্টে নামগুলো সাজানো হয়েছে নামর প্রথম বাংলা বর্ণের ক্রম অনুসারে ।
অমি আজাদ - Developer Evangelist , মাইক্রোসফট বাংলাদেশ
“অমি আজাদ” টেকি দুনিয়ার অতি পরিচিত একটি নাম । একবিংশ শতাব্দীর শুরু দিকে একুশে থেকে একটি বাংলা ফন্ট মুক্তি দেয়ার মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি । তার ক্যারিয়ারের লিস্টটি একটু বেশীই লম্বা । সাংবাদিক, ফ্রিল্যান্সার, ওয়েব ডিজাইনারসহ নানান কাজের অভিজ্ঞতা আছে তার ঝুলিতে । মাইক্রোসফট তার অবদানের জন্য একাধিকবার MVP (Most Valuable Professional) পুরস্কারে ভূষিত করেছে । বর্তমানে মাইক্রোসফটের Developer Evangelist (Evangelist= প্রচারক) রূপে কাজ করে যাচ্ছেন ।
রাগিব হাসান - Assistant Research Scientist, Johns Hopkins University
রাগিব হাসান কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছেন । রাগিব হাসান বাংলাদেশের অনেক ছাত্রের স্বপ্ন পূরণ করে দেখিয়েছেন । এই বুয়েট এলামনাই নিজের ইন্টার্ণশীপ সম্পন্ন করেছেন টেকি জায়ান্ট গুগলে ! গুগলে অবস্থানকালের তার অভিজ্ঞতাগুলো ব্লগে লিখে তিনি অনেকেরই কল্পনার সীমা বাড়িয়ে দিয়েছেন । তিনি বাংলা উইকিপিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেছেন ।
জাওয়েদ করিম - সহপ্রতিষ্ঠাতা, ইউটিউব
কল্পনা করা যায় বাংলাদেশের বংশউদ্ভুদ্ব কেউ ইউটিউবের পরিকল্পনা ও তৈরীকারী হতে পারেন ? সেই কল্পনাতীত কাজই বহু বছর আগে সত্যি করে ফেলেছেন জাওয়েদ করিম । ৩১ বছর বয়সী এই প্রোগ্রামার Paypal এর শুরু দিককার ইন্জিনিয়ার ছিলেন । Paypal র মূল কাঠামোর অনেক কিছুই তার ডিজাইন করা । বর্তমানে তিনি নতুন ভেন্চার Youniversity Ventures নিয়ে ব্যস্ত আছেন ।
জাকারিয়া চৌধুরী - ফ্রিল্যান্সার
বলতে গেলে দেশে অনেক বড় বড় ফ্রিল্যান্সার এবং অনেক প্রতিষ্ঠিত ফ্রিল্যান্সিং টিম আছে । এদের মধ্য থেকে বেছে জাকারিয়া চৌধুরীকে লিস্টে রাখার অন্যতম কারণ, তিনি শুধু নিজে ফ্রিল্যান্সিংই করেননি , নিজের অভিজ্ঞতা ব্লগের দ্বারা সবার সাথে শেয়ার করে গেছেন প্রথম থেকেই । সম্প্রতি তিনি লাভ করেছেন বেসিসের বিশেষ ফ্রিল্যান্সার পুরস্কার । তিনি নিয়মিত মাসিক কম্পিউটার জগত পত্রিকায় লেখা লেখি করেন ।
সালমান খান - প্রতিষ্ঠাতা, খান একাডেমী
এক বাংলাদেশী ইউটিউব তৈরী করেছেন তখন আরেকজন ইউটিউবকে পরিণত করেছেন শিক্ষার মাধ্যমে । কোন লাভের চিন্তা ছাড়াই সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের গণিত, বিজ্ঞানসহ নানান বিষয়ের জটিল সব তত্ত্ব অতি সাধারণ ভাষায় ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে প্রকাশ করে সাড়া ফেলে দিয়েছেন সারা বিশ্বে । স্বয়ং বিল গেটস ও তার পুত্রও আছেন তার ছাত্রদের তালিকায় । জিতেছেন গুগলের ২০ লাখ ডলার পুরস্কারও, যার পুরোটাই কাজে লাগাবেন তার তৈরী খান একাডেমীতে ।
হাসিন হায়দার - উদ্দ্যোগক্তা, Leevio
পিএইচপি ডেভেলপারদের গুরু হাসিন হায়দার সিভিল ইন্জিনিয়ার হলেও পিএইচপি প্রোগ্রামিংকেই নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছেন । তিনি একজন সফল উদ্দ্যগতাও (Entrepreneur) বটে । তার প্রতিষ্ঠানের তৈরী করা ফেসবুক পেজ ডিজাইনিং এপ্লিকেশন Miproapps আন্তজার্তিক বাজারে বেশ সাড়া ফেলেছে ।
শাহরিয়ার মন্জুর - চেয়ারম্যান, সিএসসি ডিপার্টমেন্ট, সাউথ ইষ্ট ইউনিভার্সিটি
৩৫ বছর বয়সী এই প্রোগ্রামিং প্রেমী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম উজ্জল করেছেন । তিনি ACM-ICPC এর মত বড় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার প্রবলেম সেটার(প্রশ্ন তৈরীকারী) ও বিচারকের দায়িত্ব সম্পন্ন করে থাকেন । এই বয়সেই তিনি সাউথ ইষ্ট ইউনিভার্সিটি সিএসসি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠ হয়েছেন । ইন্টারনেট জগতে কিছুটা অপরিচিত থাকলেও আন্তজার্তিক প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বেশ নামডাক তার ।
মুনির হাসান - BDOSN
গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য বিশেষভাবে পরিচত হলেও দেশের প্রযুক্তিখাতে তার অবদান অস্বীকার করার মত নয় । বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্কের গড়ার মাধ্যমে দেশে মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনকে নতুন প্রাণ শক্তি প্রদান করেন। বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক খোলা, সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে মুক্ত সফটওয়্যারের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন । বর্তমানে বিভিন্ন বড়-ছোট শহরের তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের উপর সেমিনার আয়োজন করে থাকেন ।
মেহেদী হাসান খান - প্রতিষ্ঠাতা, অমিক্রন ল্যাব
এই পোষ্টটি হয়তবা লেখা হতো না যদি না একজন স্বপ্নবাজ বাংলা লেখার মুক্ত পদ্ধতির কথা ভাবতেন । মেহেদী হাসান খানই জনপ্রিয় ইউনিকোডভিত্তিক বাংলা লেখার টুল অভ্রুর পেছনের মানুষ । মেডিকেল স্টুডেন্ট এই ডেভেলপার একটু আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন ।
মেহেদী হাসান আরিফ - প্রতিষ্ঠাতা, টেকটিউনস
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু টেকটিউনসের নাম শোনে নাই এমন কেউ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না । মাত্র আন্ডারগ্রেজুয়েট পর্যায়ের ছাত্র হলেও তিনি এমন একটি প্লাটফরম দাড় করিয়ে দিয়েছেন যা তাকে স্মরণীয় করে রাখবে দীর্ঘ দিন । এখন তিনি iPhone এপ্লিকেশন ডেভলপমেন্টের দিকে ঝুকে পড়েছেন ।
মজার ব্যাপার হচ্ছে এদের বেশীরই ভাগই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেননি । নিজের ইচ্ছা থাকলে আর পর্যাপ্ত পরিশ্রম দিলে কোন কিছুই যে অসাধ্য নয় তার প্রমাণ এই ১০জন । তাই তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, চেষ্টা ছেড়োনা, অযথা জিনিস নিয়ে সময় নষ্ট করো না, পরিশ্রম কর । সফলতা আসবেই ।
ক্ষমা প্রার্থণা: প্রথমেই বলা হয়েছে ১০জন বাছাই করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে । চেষ্টা করা হয়েছে প্রযুক্তির সব ক্ষেত্রই আয়ত্তে আনতে । বিশেষ কেউ ভূলক্রমে বাদ পড়ে গেলে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত । তাছাড়া এই ১০ জনের ছবি বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করাতেও আমরা ক্ষমা প্রার্থী ।এই লেখাটির সকল ক্রেডিট ব্লগদেশ.com এর। লেখাটি http://blogdesh.com/special/845 থেকে নেয়া।
Souce Tehctunes.com.bd
0 comments:
Post a Comment