ইউনিপেটুইউর গ্রাহকদের অভিযোগ, ইউনিপেটুইউর কর্মকর্তারা নতুনভাবে আবার প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন। ইউনিতে বিনিয়োগ করলে ইউনিপেটুইউতে পাওনা টাকার ৩৫ শতাংশ দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হচ্ছে।
ইউনিপেটুইউ কার্যক্রম শুরু করেছিল ২০০৯ সালের অক্টোবরে। স্বর্ণ ব্যবসায় বিনিয়োগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রায় ছয় লাখ মানুষ এতে বিনিয়োগ করে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, প্রতি মাসে মূলধন ও লভ্যাংশের ১০ শতাংশ করে ১০ মাসে গ্রাহকদের দ্বিগুণ টাকা দেওয়া হবে। তবে বেশির ভাগ গ্রাহকই লভ্যাংশ দূরে থাক, মূলধনই পাননি। গত বছরের ৬ জুন ইউনিপেটুইউর বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক হিসাবে থাকা ইউনিপেটুইউর ৪২০ কোটি টাকা আদালতের নির্দেশে জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইউনিপেটুইউর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সারা দেশে তিন শতাধিক মামলা করেন গ্রাহকেরা। পরে ধানমন্ডির প্রধান কার্যালয় বন্ধ করে দেন কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, ইউনি মাল্টিপারপাস ২০১০ সালের ২৩ ডিসেম্বর সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেয়। ইউনির পরিচালনা পর্ষদের অর্থ ব্যবস্থাপক এম এ তাহের, সহসভাপতি মেজর (অব.) এম এ জলিল ও সদস্যপদে আছেন মুনতাসির হোসেন। তাহের ইউনিপেটুইউর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, জলিল পরিচালক ও মুনতাসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ইউনির চেয়ারম্যান রফিকুল আলম ও সচিব নুরুজ্জামান।
নুরুজ্জামান বলেন, তিনিও ইউনিপেটুইউর গ্রাহক ছিলেন।
গত ১ জানুয়ারি উত্তরার একটি রেস্তোরাঁয় ইউনির উদ্বোধন করেন মুনতাসির। অনুষ্ঠানে ইউনিপেটুইউর কর্মকর্তা, এজেন্ট ও লিডাররা ছিলেন। ইউনিপের গ্রাহক জামাল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে তাঁরা পাঁচজন সেখানে গিয়েছিলেন। টাকা ফেরত চাইলে তাহেরসহ কয়েকজন বলেন, ‘এখানে বিশৃঙ্খলা করা যাবে না।’
ইউনির নিবন্ধন কার্যালয় খিলক্ষেত বাজারের হাজি আবদুস সালাম ম্যানশনের চারতলায়। প্রধান কার্যালয় নিকুঞ্জ ২ নম্বরের কবি ফারুক সরণিতে তুহিন ভিলার চারতলায়। সম্প্রতি প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় ‘সেক্রেটারি’ লেখা কক্ষে বসা এক ব্যক্তি ১০-১৫ জনকে বোঝাচ্ছেন। জানা গেল, তিনি ইউনির সচিব নুরুজ্জামান। সামনের লোকগুলো ইউনিপের গ্রাহক। নুরুজ্জামান তাঁদের বলেন, মাল্টিপারপাসে বিনিয়োগ করলে আগের পাওনা বাবদ ৩৫ শতাংশ দেওয়া হবে।
ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে মুঠোফোনে নিজেকে ইউনিপের গ্রাহক পরিচয় দিলে নুরুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, ইউনিপের সঙ্গে মাল্টিপারপাসের সম্পর্ক আছে। তবে ওই রকম না। কী রকম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই পরিষদে তাহের ও জলিল রয়েছেন। গ্রাহকদের আগের পাওনা দেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে আমরা মাল্টিপারপাস খুলেছি। আপনারা বিনিয়োগ করেন, টাকা ফেরত পাবেন।’
পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে মুঠোফোনে নুরুজ্জামান বলেন, ইউনিপের ভুক্তভোগী গ্রাহকদের নিয়ে এই মাল্টিপারপাস। জলিল ও তাহেরও ভুক্তভোগী গ্রাহক। ৩৫ শতাংশ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইউনিপে থেকে একটি জমি কিনেছি। ওই জমির টাকা ইউনিপেকে না দিয়ে গ্রাহকদের দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি জানান, মাল্টিপারপাসের সঙ্গে মুনতাসিরের কোনো সম্পর্ক নেই।
সমবায় অধিদপ্তরে দেওয়া কাগজপত্রে সহসভাপতি হিসেবে মুনতাসিরের নাম থাকার বিষয়ে নুরুজ্জামান বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে প্রথমে তিনিসহ কয়েকজন ছিলেন।
নতুন ধরন: মাল্টিপারপাসে লাইট, সুপার ও প্রিমিয়ার নামে তিনটি প্রকল্প রয়েছে। বলা হচ্ছে, লাইটে ৪২ হাজার, সুপারে এক লাখ পাঁচ হাজার এবং প্রিমিয়ারে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে ১৮ মাস সময়ে দ্বিগুণ দেওয়া হবে। তবে লভ্যাংশের ওপর ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ হিসেবে কাটা হবে। তবে মেয়াদের আগে বিনিয়োগ ওঠানো যাবে না।
ইউনিপের গ্রাহক মাহফুজুর রহমান বলেন, বিনিয়োগের ৩৫ শতাংশ দেওয়ার আশ্বাস আসলে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার ফাঁদ। আরেক গ্রাহক মো. সোহেল বলেন, এই ফাঁদে ইতিমধ্যে অনেকে পা দিয়েছেন।
ঢাকা জেলা সমবায় কর্মকর্তা গালিব খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউনি মাল্টিপারপাসের কর্মকর্তারা ইউনিপের কর্মকর্তা, তা জানলে নিবন্ধন দিতাম না। ১৮ মাসে দ্বিগুণ দেওয়ার আশ্বাস, রেজিস্টার্ড কার্যালয় ছাড়া কার্যালয় খোলা প্রভৃতি সমবায় আইনবিরোধী।’ তিনি বলেন, সেখানে পরিদর্শনের পর এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেখানে আইনবিরোধী কিছু হলে এবং ইউনিপের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে নিবন্ধন বাতিল করা হবে।
0 comments:
Post a Comment