আল-জাজিরার এক নিবন্ধে বলা হয়, গুয়ানতানামো দ্বীপটি যেন আইনের বাইরে। মার্কিন বাহিনী নিয়ন্ত্রিত গুয়ানতানামো বে কারাগারে এখনো জঙ্গি, সন্ত্রাসী সন্দেহে বিভিন্ন দেশের ১৭১ জন বন্দী আটক আছে। ইতিমধ্যে ৮০০ জন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
গুয়ানতানামো বে কারাগারে বর্বরভাবে বন্দীদের নির্যাতন করা হয়। তাদেরকে নির্দয়ভাবে পিটানো হয়। ঘুমাতে দেওয়া হয় না ঠিকভাবে। মানসিক নির্যাতনও চলে। অতি উচ্চ বা নিম্ন তাপমাত্রায় রাখা হয়। আর দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকার এক প্রকোষ্ঠে আটকে রাখা হয়। যাদেরকে গুয়ানতানামো কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, মনে করা হয়, তারা সবাই সন্ত্রাসী, জঙ্গি। তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ধরে আনা হয়েছে। তাদের কোনো আইনি অধিকার নেই। প্রকৃতপক্ষে, মোট বন্দীদের মধ্যে কেবল কিছুসংখ্যক বন্দীকে মার্কিন বাহিনী গ্রেপ্তার করে। বেশির ভাগ বন্দীই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের জঙ্গি, বিভিন্ন উপজাতি গোষ্ঠীর সদস্য ও অন্যান্য কর্মকর্তা।
গুয়ানতানামো বে কারাগারে প্রতিনিয়ত মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে মার্কিন বাহিনী। যার ফলে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত মানুষের মানবাধিকারের রক্ষক হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো প্রশ্নের সম্মুখীন। মার্কিন সেনাবাহিনীর অনেক কর্মকর্তা আছেন, যাঁরা স্বীকার করেন গুয়ানতানামো কারাগারের কারণে অনেক সময় নতুন করে জঙ্গি, সন্ত্রাসী তৈরি হচ্ছে। তারা অনেক বেশি হিংস্র ও ক্রুদ্ধ হয়ে উঠছে মার্কিন বাহিনীর ওপর। প্রতিশোধপরায়ণও হয়ে উঠছে অনেকে। ফলে মার্কিনিদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় আরও বাড়ছে। এ পর্যন্ত মাত্র ছয়জন বন্দীকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ফলে কারাগারটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে অনেকে।
গুয়ানতানামো বে কারাগারটি বন্ধ করা বা চালু রাখা নিয়ে আসলে মার্কিন সরকারের অনেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠানও দায়ী। এদিকে কংগ্রেস চাইলে এটি বন্ধ করে দিতে পারে। কংগ্রেস সদস্যরা খুব ভালোভাবেই জানেন, গুয়ানতানামো কারাগার সম্পর্কে কোনটি সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়। কিন্তু, তাঁরা কারাগারটি বন্ধের ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহী নন বা ত্বরিত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন না।
গুয়ানতানামো কারাগারটি বন্ধ না হওয়ার পেছনে প্রেসিডেন্ট ওবামাকেও ব্যর্থতার দায় নিতে হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন। এক বছরের মধ্যে কারাগারটি বন্ধ করার অঙ্গীকার করলেও তিনি তা রাখতে পারেননি। সে জন্য কংগ্রেসের সমর্থন আদায় করতেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি বেশির ভাগ বন্দীকে বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের মতো তিনিও এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থ হয়েছেন।
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী প্রতিটি বন্দী, তাঁকে আটকে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। এ ব্যাপারে আদালতে কাছে তিনি বিচার চাইতে পারেন। কিন্তু, গুয়ানতানামো কারাগারের বন্দীরা এ অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
আসলে গুয়ানতানামোর বন্দীদের বিচারের আওতায় আনা বা মুক্তির ব্যাপারে মার্কিন সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই এগিয়ে আসতে হবে। দেশটির সুপ্রিম কোর্টকে নির্ধারণ করে দিতে হবে, যুদ্ধের সময় কাদেরকে বন্দী করা যাবে, আর কাদেরকে যাবে না। কংগ্রেসকে অবশ্যই বন্দীদের মুক্তি বা নিজ নিজ দেশে পাঠানোর ব্যাপারে অপ্রয়োজনীয় বাধা বা আইনগুলো বাতিল করতে হবে। আর এ ব্যাপারে সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। নইলে তিনিও দায় এড়াতে পারবেন না। আল-জাজিরা অবলম্বনে। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment