ইরাকে সামরিক শক্তি সংহত করার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী নূরি আল-মালিকি। তবে তাঁর সরকারের সমাজের সব অংশের প্রতিনিধিত্ব নেই। সরকারের কেন্দ্রভাগ মূলত ইরানপন্থী শিয়া মুসলিমদের নিয়ে গঠিত। ২০১০ সালের মার্চের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অসাম্প্রদায়িক ইরাকিয়া পার্টি বিজয়ী হলেও মন্ত্রিপরিষদে তারা কোণঠাসা। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফরের সময়ও তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল না।
বিশ্লেষকদের মতে, শিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই সরকার ইরাকের ভবিষ্যতের জন্য আশাব্যঞ্জক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পশ্চিমা অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইরাক নিয়ে এই অনিশ্চয়তা ওয়াশিংটনের ভুল চিন্তারই ফসল।
সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ২০০৩ সালের জুলাইয়ে ইরাকে নতুন করে রাজনৈতিক ব্যবস্থা দাঁড় করানোর সময় যুক্তরাষ্ট্রের মাথায় ছিল জাতিগত আনুপাতিক হার। এতে ইরাকিদের মধ্যে শুরু হলো শিয়া-সুন্নি-কুর্দির বিভেদ। যে ইরাকিরা নিজেদের সব সময় আরব ভেবে এসেছে, তারা হঠাৎ করে বিভক্ত হয়ে গেল গোষ্ঠীগতভাবে।
লক্ষণীয় যে ইরাকিরা নিজেরাই প্রতিবাদ জানাল এই ব্যবস্থার। ২০০৬ ও ২০০৭ সালের জাতিগত সংঘাতে ক্ষয়ক্ষতির পর তারা নতুন করে অনুভব করল জাতীয়তাবাদ। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার পরিবেশ পেলেন শিয়া নেতা নূরি আল-মালিকি, জাতিগত বিষয়গুলোর ওপর যার কর্তৃত্ব। অনেক সুন্নিও মালিকির সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি বিবেচনা করতে শুরু করেন।
২০০৯ সালের মে মাসে তেহরানে জড়ো হলো শিয়ারা, যারা স্থানীয় নির্বাচনে মালিকির সমর্থকদের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল। তাদের লক্ষ্য, একটি খাঁটি শিয়া জোট গঠন, যারা চূড়ান্তভাবে মালিকিকেই আত্মীভূত করবে।
২০১০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য মালিকি আরও বেশি করে শিয়াপন্থী হয়ে গেলেন। কিন্তু মালিকির এই পরিবর্তন বুঝতে অসমর্থ হলো মার্কিন প্রশাসন। একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক ইরাকিয়া পার্টির সঙ্গে জোট করে একটি যোগ্য ও স্থিতিশীল সরকার গঠন করা ও কুর্দিদের বিষয় তাঁদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার যে সুযোগ মার্কিন প্রশাসন পেয়েছিল, তা মূল্যায়ন করতে তারা ব্যর্থ হলো। বরং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে গঠিত হলো একটি বিশাল আকারের সরকার, যেখানে ক্ষমতা ভাগাভাগির বিষয়টি ঠিকমতো হলো না।
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে ইরাক রেখে যাচ্ছে, তা ২০০৯ সালের আশাবাদী ইরাকের চেয়ে বরং ২০০৬ সালের জাতিগত সংঘাতের সময়কার মতোই বেপরোয়া ও বিভক্ত। নিউইয়র্ক টাইমস। প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment