সরকার কত স্কুলে কত শিক্ষক দেয়। আমাদের স্কুলে একটা শিক্ষকও দেয় না। সরকার কি আমাদের স্কুল চোখে দেহে না?
কথাগুলো টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মালতিপাড়া রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী বন্যা, ফাতেমা, আব্দুল¬াহ, রহিমার।
শিক্ষার্থীরা জানায়, গত সাত মাস ধরে তাদের স্কুলে সরকারের নিয়োগ করা কোনো শিক্ষক নেই। আছে ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়োগ দেওয়া তিন শিক্ষক।
স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি এখন স্কুলটি টিকিয়ে রাখতে ছাত্রদের বেতনের উপর নির্ভর করে এই তিনজনের বেতন চালাচ্ছে। সেই বেতনও নিয়মিত দেওয়া সম্ভব হয় না।
সদর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলে মালতীপাড়ায় ১৯৭২ সালে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই স্কুলের লেখাপড়ার মান ভাল। ১৯৮১ সালে স্কুলটি সরকারি অনুদান পেতে শুরু করে।
স্কুলের চারজন শিক্ষক একে একে অবসরে যাওয়ার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানায় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, স্কুলটিতে বর্তমানে ৩৭২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত সব শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর সাত মাস আগে ব্যবস্থাপনা কমিটি তিন হাজার টাকা বেতনে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়।
কিন্তু তাদের মাত্র তিন মাসের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিমাসে ২০ টাকা করে বেতন আর ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। এদিয়ে স্কুলটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে বলে জানান রুবেল।
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূর আলম মৃধা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ১৯টি বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এতে মোট ৭২টি পদের বিপরীতে বর্তমানে ২৭টি পদ খালি আছে।
এসব বিদ্যালয়ে আগে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটিই শিক্ষক নিয়োগ করতেন।
কিন্তু ২০০৯ সালের ১০ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিধানটি বাতিল করলে একটি রেজিস্টার্ড স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন।
তখন থেকে দেশের সব রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
তবে স¤প্রতি আদালত সেই মামলাটি খারিজ করে দেয় বলে জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দা মাহফুজা খানম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মামলাটি খারিজ হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে কোনো কাগজপত্র আমাদের হাতে এসে পৌঁছেনি।"
কাগজপত্র হাতে এলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। এরজন্য মাস ছয়েক সময় লাগবে বলে জানান মাহফুজা খানম।
মালতিপাড়া বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়োগ করা প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন (৫৭) বলেন, স্কুলটিতে ১৯০ জন ছাত্রী ও ১৮২ জন ছাত্র রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের।
তিনি বলেন, "বিনা বেতন আর বইখাতা দিয়েও যেখানে ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা কষ্টকর সেখানে প্রতি মাসে ২০ টাকা বেতন দিয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে অনেক অভিভাবকই আগ্রহী হয় না। ফলে স্কুলে উপস্থিতির হার দিনে দিনে কমছে।"
তিনি জানান, স্কুলটির টিনের ঘরও সংস্কারের অভাবে বেহাল। যেকোনো সময় সেটি ভেঙ্গে পড়তে পারে। নেই কোনো টয়লেট বা অন্যান্য সুবিধা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
0 comments:
Post a Comment