প্রচলিত আছে, প্রতিটি মানুষ তার জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারে। এমনকি সেই ঘটনার পারিপার্শ্বিকতাও সে বিস্তারিত মনে রাখতে পারে। যেমন—১৯৯৭ সালে যে আইসিসি ট্রফি জিতে বাংলাদেশ প্রথম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পেয়েছিল, সেই প্রতিযোগিতার ফাইনালের দিন কে কী অবস্থায় ছিলেন, শেষ বলের উত্তেজনাটি কে কোন অবস্থায় উপভোগ করেছিলেন, সেটা অনেকেই মনে করতে পারেন। মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে বিশেষ বিশেষ ঘটনার সময়গুলো ছবির মতো সংরক্ষিত থাকে। দেখা যায়, মানুষ তার জীবনের অনেক ঘটনাই কোনো বিশেষ ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে মনে রাখতে পারে। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সময়ের স্রোতে এই সংরক্ষিত স্মৃতিগুলো ধূসর হতে থাকে। পাঁচ বছর আগেও যে ঘটনার বিস্তারিত মনে ছিল, পাঁচ বছর পর সেই ঘটনার অনেক কিছুই স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়। এ সময় অনেক কিছুই মানুষ নিজের মতো করে কল্পনা করে, যেগুলো ঘটেনি।
মানুষের পঞ্চ অনুভূতির উৎসস্থল মস্তিষ্ক। নিঃসন্দিগ্ধতা, দৃষ্টি, শ্রুতি, স্বাদ, স্পর্শ—এই পাঁচটি অনুভূতির প্রকাশ মানুষের মধ্যে হয়ে থাকে মস্তিষ্কের মাধ্যমে। মানুষ চোখ দিয়ে দেখে, কান দিয়ে শোনে, হাত দিয়ে স্পর্শ করে। কোনো বস্তুর রং যা, মানুষ সেটাই দেখে। সৃষ্টিকর্তা সবুজ রঙের গাছ তৈরি করেছেন, মানুষ তা সবুজই দেখে। যার স্বাদ যেমন, জিহবা দিয়ে সেই স্বাদই গ্রহণ করে। তবে জিহবার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন স্বাদ গ্রহণ করে থাকে। যেমন—একটি অংশ গ্রহণ করে নোনতা স্বাদ। অন্য একটি অংশ গ্রহণ করে মিষ্টি স্বাদ। তবে অন্য প্রাণীদের চেয়ে মানুষের অনুভব করার ক্ষমতা একটু হলেও কম। কুকুর অনেক দূর থেকে গৃহকর্তার গায়ের গন্ধ পায়। সাপ দূর থেকেই বুঝতে পারে তার খাদ্যের উপস্থিতি; মানুষ হয়তো সেটা পারে না। কিন্তু তার পরও মানুষ তার ইন্দ্রিয়গুলো ব্যবহার করতে পারে অনেক সৃজনশীল কাজে।
মস্তিষ্ক একধরনের কম্পিউটারই। কম্পিউটারের প্রসেসরের যেমন বিভিন্ন গতি থাকে, তেমনি একেক মানুষের মস্তিষ্কও একেক রকম। কেউ কোনো জিনিস তাড়াতাড়ি বুঝে যায়, কারও একটু দেরি হয়। কেউ অঙ্ক ভালো পারে, কেউ বা সাহিত্য। কারও মনে রাখার ক্ষমতা অনেক বেশি, কারও বা কম। কিন্তু মানুষের অনেক অনুভূতির সঙ্গে মিল রেখে সৃষ্টি করা হয়েছে অনেক প্রযুক্তির। ফ্রয়েড আবেগের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন বাষ্পীয় ইঞ্জিনের প্রযুক্তি। মস্তিষ্ককে কম্পিউটার বলা হলেও মস্তিষ্কের আদলেই যে কম্পিউটারের উৎপত্তি, এটা অবশ্য অনেক পুরোনো কথা। মানুষ বিভিন্ন তড়িৎ সার্কিটের সৃষ্টি করেছে মস্তিষ্কের অনুরণনগুলোর আদলে, মানুষ তাঁর চিন্তা থেকেই ইন্টারনেট ও ওয়েব-জগতের সৃষ্টি করেছে। বলা যায়, মস্তিষ্ক একধরনের প্রযুক্তি, যা সব প্রযুক্তির উৎসস্থল।
কিসে সুখী হওয়া যায়, এ বিষয়ে মানুষের অনুভূতি খুবই সজাগ। এমনকি মস্তিষ্কবিকৃত একজন মানুষও নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকে। মানুষ সব সময় ভাবতে থাকে, কোন জিনিসটা তাকে খুশি করতে পারে, আনন্দিত করতে পারে। বাংলাদেশের সার্বিক প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবারের বিকেলবেলাটা বেশির ভাগ চাকরিজীবীর জন্য কেমন যেন একটা আনন্দের আবহ তৈরি করে। কারণ, সামনের দুই দিন (শুক্র, শনি) ছুটি। একইভাবে তাঁদের আনন্দানুভূতিতে ভাটা পড়ে শনিবার রাতে। রোববার সকালে বেশির ভাগেরই মেজাজ-মর্জি খারাপ থাকে, অতি ব্যস্ত একটি সপ্তাহের চিন্তায়। এসবই মানুষের মস্তিষ্কের অনুভূতি। অর্থাৎ, মানুষের মস্তিষ্ক একই সঙ্গে সুখ ও দুঃখ দুটোরই অনুভূতি সৃষ্টি করে।
নারী-পুরুষের মস্তিষ্ক ভিন্ন। আকারে-প্রকারে আলাদা। একজন পুরুষ যা চিন্তা করে, একজন নারী তা করে না। প্রকৃতিগতভাবে নারী-পুরুষের মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও ভিন্ন। ছেলেদের মস্তিষ্ক কিছুটা বাস্তবানুগ। মেয়েদের মস্তিষ্কের অনুরণনে আবেগ আর ভালোবাসার অনুভূতি অনেক বেশি, ছেলেদের মস্তিষ্ক বিশেষায়িত। তবে এর মানে এই নয় যে, ছেলেদের মস্তিষ্ক মেয়েদের চেয়ে বেশি কার্যকর। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বোঝা যায় তাদের ব্যবহারে। তবে ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা বোধ হয় তাদের জৈবিক গড়নের কারণেই ফুটে ওঠে। জৈবিক পার্থক্যের কারণে ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্ন্ন বিশেষায়িত ব্যাপার-স্যাপার থাকে।
0 comments:
Post a Comment