এরা ফুলচুষি বা ফুলচুষকি নামেও পরিচিত। এ দেশে ফুলঝুরির আটটি প্রজাতির মধ্যে মেটেঠোঁট ফুলঝুরি ও লালপিঠ ফুলঝুরি (Scarlet-backed Flowerpecker)
মেটেঠোঁট ফুলঝুরি দেখতে মোটামুটি সুন্দর; বৈজ্ঞানিক নাম Dicaeum erythrorynchos।
ছোট্ট এই পাখিগুলো চমৎকার ভঙ্গিমায় ওড়ে। বন ও বাগানের ওপর দিয়ে উড়তে পছন্দ করে। মিষ্টি স্বরে গান গায়। তবে গলার স্বর খুব জোরালো নয়। এরা খুবই লাজুক ও ভিতু। আবার কিছুটা চতুরও বটে। খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর। ডালপালার আড়ালে ঘুরে বেড়ায়। লুকিয়ে গান গায়। কিন্তু গান শুনেও খুঁজে বের করা কষ্টকর। জনসমক্ষে আসে না। এমন কোনো শব্দ করে না, যাতে মানুষের কাছে ধরা পড়ে যায়। এরা অন্যান্য ছোট পাখি, যেমন: মৌটুসি, নীলটুনি বা হামিংবার্ডের মতো আকাশে স্থির থেকে উড়তে পারে না; তবে চেষ্টা করে। তা ছাড়া হামিংবার্ডের মতো পেছন দিকেও উড়তে পারে না। মেটেঠোঁট ফুলঝুরির প্রধান খাবার পাকা ফল। যেমন: সফেদা, আতা, কলা, পেঁপে, পেয়ারা এমনকি বেল। খায় হাভাতের মতো। ফল খেতে খেতে ফলের ভেতর ঢুকে যায়। বাইরে থেকে বোঝা যায় না যে ভেতরে বসে ফল খাচ্ছে। অথচ ফলটি নড়ছে। হঠাৎ দেখলে ভূতুড়ে কাণ্ডই মনে হবে। ফলের ভেতর ঢুকে অদৃশ্য হয়ে ফল খাওয়া এমন পাখি এ দেশে আর দ্বিতীয়টি নেই। এদের ঠোঁটের এমন কোনো সামর্থ্য নেই যে সামান্য আধা পাকা ফলও ছিদ্র করে। কিন্তু অন্যের ছিদ্র করা ফলে দখল নেওয়ার যোগ্যতা আছে ভালোই। ছোট ছোট ফলের ওপরে বসে বা ঝুলে যখন ওরা খায়, তখন দেখলে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। খোসা ছাড়িয়ে পাকা লিচু খায় শৈল্পিক ভঙ্গিতে। এরা অনেক সময় মধুও পান করে। অন্যদিকে, লালচে ফুলঝুরিগুলো ফুলের মধুই বেশি পছন্দ করে; তা ছাড়া কীটপতঙ্গ, মাকড়সা, ফল ইত্যাদিও খায়।
বছরে তিনবার বাচ্চা দেয়। বাসা হয় খুব ছোট। সাধারণত মাটি থেকে পাঁচ থেকে ১০ মিটার উঁচুতে কোনো একটি গাছের সরু ডালে বাসা বাঁধে। তবে খুব গোপনে, যেন কেউ না দেখে। সাধারণত স্ত্রী পাখি তিন-পাঁচ দিনে বাসা বানায়। বাসা দেখতে অনেকটা রাজহাঁসের ডিমের আকারের হয়। নরম তন্তু দিয়ে খুব মসৃণ করে বাসা বানায়। বাসা পরিচ্ছন্ন ও গোছানো থাকে সব সময়। ঝুলন্ত বাসা দেখতে কিছুটা মৌটুসির বাসার মতো। তবে মৌটুসির মতো এরা বাসার দরজার ওপর কোনো কার্নিশ বানায় না। মেটেঠোঁট ফুলঝুরি সাধারণত দুটো ডিম পাড়ে। ডিমের রং ঘোলাটে সাদা। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে ১৩-১৫ দিনে। ফোটার পর মা-বাবা দুটিই বাচ্চাদের খাওয়ায় ও যত্ন নেয়। বাচ্চারা উড়তে শেখে ১৩-১৪ দিনে। প্রায় ২২-২৪ দিন বয়সে ছোট্ট লাজুক পাখিগুলো বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়।
0 comments:
Post a Comment