মন-পড়া যন্ত্র আসছে

মানুষ কী ভাবছে_তা জানার আগ্রহ ও চেষ্টা বহু দিনের। অনেক দিন ধরেই গবেষকরা চেষ্টা চালাচ্ছেন এমন এক যন্ত্র উদ্ভাবনের, যা মুহূর্তেই বলে দিতে পারবে কারো মনের কথা। এবার গবেষকরা জানিয়েছেন, তাঁরা মন পড়ার এমন এক যন্ত্র উদ্ভাবনের একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছেন। শিগগিরই বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে এ যন্ত্র।
ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোর গবেষকরা এমন এক কৌশল উদ্ভাবন করেছেন, যা মানুষের চিন্তার বিভিন্ন ধরন (প্যাটার্ন) অনুযায়ী মস্তিষ্কে তৈরি তরঙ্গ (ওয়েভ) বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। গবেষকরা জানিয়েছেন, আগে এ বিষয়ে গবেষণায় তরঙ্গের অর্থ উদ্ধারে সক্ষমতা পাওয়া গেলেও সেটি থেকে দৃষ্টিগোচর হয় (ভিজ্যুয়াল), এমন কোনো তথ্য তৈরি করা সম্ভব ছিল না।
তবে এবার তাঁদের গবেষণায় মস্তিষ্কের সেসব তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে সেগুলো থেকে দর্শনযোগ্য তথ্যও পুনরুৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। গবেষকদলের সদস্য ফিলিপ শিনস জানিয়েছেন, আগে শুধু তরঙ্গগুলো শনাক্ত করে সেগুলোর অর্থ জানা বা বোঝা যেত। কিন্তু এবার যে কৌশল তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন, তাতে অর্থ বোঝার পাশাপাশি তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে সেগুলোর চিত্রায়ণও সম্ভব হয়েছে। মস্তিষ্ক কিভাবে কোনো তথ্য সংকেতবদ্ধ (এনকোড) ও ধারণ করে, সেটিই এবার বিশ্লেষণ করে উদ্ধার (ডিকোড) করা গেছে।

গবেষক ফিলিপ শিনস জানান, ছয়জন ব্যক্তিকে সুখ, ভয় ও চমকে যাওয়ার মতো মানুষের বিভিন্ন ধরনের অভিব্যক্তির ছবি দেখানো হয়। পরে তাঁদের ওই সব ছবির শুধু চোখ বা মুখ_এমন অংশের খণ্ডিত ছবি দেখিয়ে সেটিকে আগের দেখানো অভিব্যক্তির ছবিগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে কোনটি কোন অভিব্যক্তির ছবি, তা শনাক্ত করতে বলা হয়। এ সময় দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের তরঙ্গ বিভিন্ন ধরনের তথ্য বহন করছে। যেমন ‘বিটা’ তরঙ্গ (১২ হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি) ওই সব ছবির চোখের অংশের তথ্য ধারণ করেছে। ‘থিটা’ তরঙ্গ (চার হার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি) মুখের অংশের তথ্য ধারণ করেছে। এ ছাড়া মস্তিষ্কের ওই সব তরঙ্গের কাঠামোগত অন্যান্য দিক অনুযায়ীও এসব তথ্য বিশ্লেষণ ও পুনরুদ্ধার করা হয়। ওই ছয় ব্যক্তির মস্তিষ্কের সঙ্গে ইলেকট্রোড সংযোজন করে এসব তথ্য উদ্ধার ও বিশ্লেষণ করা হয়।

গবেষকরা বলছেন, কোন তথ্য মস্তিষ্ক কিভাবে ধারণ করে, সে অনুযায়ী আলাদা তথ্যের জন্য আলাদা তরঙ্গ তৈরি হয়। ওই সব তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে দর্শনযোগ্য তথ্যে রূপান্তর করা গেছে। এ প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অচিরেই মানুষের চিন্তা-ভাবনা বুঝে নেওয়ার মতো ক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্র উদ্ভাবন করা যাবে।

সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইন