সুখের ঠিকানা কোথায়

বাংলাদেশের অবস্থান ৯৬তম
আপনি কি সুখী? জীবনটা উপভোগ করার জন্য আপনার কী কী প্রয়োজন? প্রশ্ন মাত্র দুটি, উত্তর ‘অসংখ্য’। একটা সুন্দর বাড়ি, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, গাড়ি, বেড়ানোর সুযোগ-একজনের সঙ্গে আরেকজনের উত্তর মেলানো এবং এর মধ্য দিয়ে কোনো একটি স্থির সিদ্ধান্তে পেঁৗছানো_অসম্ভব কঠিন একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু যদি প্রশ্নটা হয় দেশের ক্ষেত্রে তাহলে এর উত্তর কি মিলবে না? এর উত্তর মেলানোর চেষ্টা করেছে লন্ডনভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন লেগাটাম ইনস্টিটিউট। তাদের গবেষণায়, ঐশ্বর্য আর মনের সুখ_এই

দুয়ে মিলে বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশের তালিকার এক নম্বর দেশ নরওয়ে আর সবচেয়ে নিচে জিম্বাবুয়ে। গেল বছরজুড়ে ১১০টি দেশের ওপর গবেষণালব্ধ এসব তথ্য সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৯৬তম।

লেগাটাম ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পাকিস্তান একেবারে তলানিতে। তালিকার শীর্ষ ১০ দেশ_নরওয়ে, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র। আর তালিকার সবচেয়ে নিচের সারির ১০ দেশ_জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, মধ্য আফ্রিকা, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, ইয়েমেন, কেনিয়া, মোজাম্বিক, ক্যামেরুন ও জাম্বিয়া।

সহসূচক অনুসারে ১১০ দেশের হিসাবে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৬তম, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা খাতে অবস্থান ৯৫, সরকার পরিচালনায় অবস্থান ৯৫, শিক্ষায় ৯১, স্বাস্থ্যে ৯০, নিরাপত্তায় ৯৪, ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রে ৪৬ ও সামাজিক পুঁজির ক্ষেত্রে ১০৯তম। আর সামগ্রিকভাবে এসব তথ্য ও মানুষের ব্যক্তিগত সুখের নিরীখে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৬তম।

মূলত অর্থনীতি, বেসরকারি খাতের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা, সরকার পরিচালনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সামাজিক পুঁজি_এই আট মূল সূচকের মাধ্যমে এ জরিপ চালানো হয়, যার অন্তর্গত ছিল ৭৯টি ভিন্নধর্মী সহসূচক। প্রকৃত অর্জিত ধন-সম্পদ ও জীবনযাত্রার মান এই দুটিই ছিল লেগাটাম সমৃদ্ধি সূচকের মূল বিবেচনা। এই জরিপের আওতায় বিশ্বের ৯০ শতাংশ জনসংখ্যাকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।

উল্লেখ্য, লন্ডনকেন্দ্রিক লেগাটাম ইনস্টিটিউট পাঁচ বছর ধরে এ সমীক্ষা চালিয়ে আসছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য লেগাটাম ইনস্টিটিউট গ্যালাপ পোলিং গ্রুপ, দ্য হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ও ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ডাবি্লউটিও, ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটরস, জিডিপি, ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অর্গানাইজেশন, ইউএন হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট, ওইসিডি, ওয়ার্ল্ড ভ্যালুস সার্ভের মতো ১২টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য সূত্র ব্যবহার করে।
২০১০-এর সমৃদ্ধি সূচক অনুসারে ১১০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৬তম। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান ৮৮তম, পাকিস্তান ১০৯তম, শ্রীলঙ্কা ৫৯তম, নেপাল ৯১তম। আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে এ জরিপের বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। আফ্রিকার দেশগুলো এই তালিকার সবচেয়ে নিচের সারিতে অবস্থান করছে। এই তালিকায় স্ক্যান্ডিনেভিয়ার অন্তর্গত দেশগুলোর অবস্থান শীর্ষ ১০-এর মধ্যেই। এ ছাড়াও শীর্ষ ১০-এ আছে সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ, যেগুলো তেল-গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল নয়।

২০১০ সালের সমৃদ্ধি সূচকে সবচেয়ে অগ্রগতি করেছে ইন্দোনেশিয়া ও আলজেরিয়া। বেশ কিছু ক্ষেত্রে তারা চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছে। ২০০৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান ছিল ৭০, সেখানে ২০১০ সালে তারা ১৫ ধাপ এগিয়ে ৫৫তম অবস্থানে উঠে এসেছে। একইভাবে আলজেরিয়া ৭৯তম অবস্থান থেকে এগিয়েছে ১২ ধাপ।

২০১০ সালের প্রোসপারিটি ইনডেঙ্ তৈরির সময় তিনটি প্রধান বিষয়কে বিবেচনায় রাখা হয়েছিল, রিসার্চ বা গবেষণা, প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্ত যাচাই-বাছাই এবং পর্যালোচনা। তবে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ এও জানিয়েছে সমৃদ্ধি সূচক হচ্ছে সমৃদ্ধি অর্জনের কতগুলো নিয়ামকের ধারণা মাত্র। এর মাধ্যমে কোনোভাবেই যাচাই করার চেষ্টা করা হয়নি সত্যিকার অর্থে কোন দেশটি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে সেসব সূচককেই, যেগুলো সমৃদ্ধি অর্জনের মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করে থাকে। আর এগুলোর অবস্থান কোন দেশের মধ্যে কী রকম_এই জরিপে শুধু এসব তথ্যই খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে।

তানজিমুল নয়ন