রাজধানীর মাণ্ডায় পানির পাম্প এলাকার দুদু মিয়ার গলি ধরে পূর্ব দিকে ৩০ গজের মতো এগোলেই হাতের ডানে-বাঁয়ে বস্তির মতো ছয়-সাতটি ঘর। তবে ঘরগুলো সেমিপাকা। সাত্তার মিয়ার বাড়ি বললে সবাই চেনে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা।ঘরগুলোর একটি থেকে কাঠের হুইলচেয়ারে বসে বের হয়ে এলেন এক যুবক। চেয়ারটি পেছন থেকে ঠেলছে এক কিশোর। যুবকের বয়স ২৮-৩০ বছর। কিশোরের ১২ থেকে ১৪। দুজনই প্রতিবন্ধী এবং ভিক্ষুক। যুবকের দুই পা সরু লাঠির মতো। কিশোরটি কুঁজো। কিশোরকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে নাম-পরিচয় জানতে চাইলে সে জানায়, তার নাম আলতাফ, বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। যুবক তার আপন বড় ভাই, নাম মোক্তার। তাদের বাবা প্রয়াত আলী হোসেন। অভাবের সংসারে ভাইকে নিয়ে সে ভিক্ষা করে।
শনিবার, রাত দেড়টা। মাণ্ডায় রশিদ মিয়ার তিনতলা বাড়ি। নিচতলার একটি ঘরে বেশ কয়েকবার কড়া নাড়লে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেন এক নারী। বয়স ৩০-৩৫ বছরের মতো। চোখে-মুখে রাজ্যের বিরক্তি। কিন্তু পুলিশ দেখে চুপ। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, বাসায় তিনটি ঘর। একটি ঘরে মহিলা তাঁর স্বামীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘরে মশারি টানানো খাট, আলনা, ছোট কাঠের আলমারির ওপর ১৪ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন। মহিলা তাঁর নাম জানালেন আয়েশা আক্তার। তবে এলাকাবাসী তাঁকে হেলালের মা নামে চেনে। ততক্ষণে তাঁর স্বামীও ঘুম থেকে উঠে পুলিশ দেখে বাথরুমের ওপরে মালামাল রাখার জায়গায় গিয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে সেখান থেকে টেনে নামানো হলো। তাঁর নাম সালাম। নিজেকে রিকশাচালক দাবি করলেও সঙ্গে থাকা পুলিশের সোর্স রফিক জানান, তিনি আসলে ভিক্ষুকদের সরদার। পাশের একটি ঘর বাইরে থেকে তালা দেওয়া। অন্ধকার। ভেতরে কারো চাপা গলার স্বর শুনতে পেয়ে পুলিশের আদেশে তালা খুলে দেন আয়েশা। ভেতরে গিয়ে আলো জ্বেলে দেখা যায়, মেঝেতে বসে আছেন পাঁচজন বৃদ্ধা। কারো বয়সই ৮০ বছরের নিচে হবে না। জীর্ণ শরীরে শতছিন্ন নোংরা পোশাক। ঘরের মধ্যেই মলমূত্র ত্যাগ করায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আয়েশা জানান, এই বৃদ্ধারা তাঁর ভাড়াটে। মাথায় গণ্ডগোল আছে। রাতে পালিয়ে যেতে পারে আশঙ্কায় ঘর বাইরে থেকে তালা মেরে রাখা হয়। বৃদ্ধারা তাঁর স্বামীর নিয়ন্ত্রণে থেকে ভিক্ষা করেন।
0 comments:
Post a Comment