নিপাহ ভাইরাস কি?
নিপাহ ভাইরাস একটি Emerging zoonotic ভাইরাস অর্থাৎ জন্তু থেকে মানুষে ছড়ানো ভাইরাস। ভাইরাসটি মস্তিষ্ক বা শ্বসনতন্ত্রে প্রদাহ তৈরীর মাধ্যমে মারাত্মক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। এটি Henipavirus জেনাস এর অন্তর্গত একটি ভাইরাস।নিপাহ ভাইরাস দ্বারা সৃষ্টরোগঃ
নিপাহ ভাইরাস দিয়ে এনসেফালাইটিস নামক মস্তিস্কের প্রদাহজনীত রোগ হয়। এই রোগটি হার্পিস ভাইরাস (herpes simplex), ফ্লাভিভাইরাস (Flaviviruses) সহ অন্যন্য ভাইরাস দ্বারাও হতে পারে। তবে আমাদের দেশে বর্তমানে নিপাহ ভাইরাস দিয়ে সংক্রমনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইতিহাসঃ
ভাইরাসটি প্রথম সনাক্তকরা হয় মালেশিয়ায় 1999 সালে শুকরের খামারে কাজ করা চাষীদের মাঝে। এ পর্যন্ত এ ভাইরাস দ্বারা 16 টি মহামারীর কথা জানা যায় যার বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়ায়।যেভাবে ছড়ায়ঃ
ভাইরাসটি মালেশিয়া ও সিঙ্গাপুরে শূকরের মাধ্যমে প্রথম ছড়িয়েছিল। আক্রান্ত শূকরের সংস্পর্স, তাদের লালা ও সংক্রমিত মাংশের মাধ্যমে এর বিস্তার ঘটে। বাংলাদেশ ও ভারতে বাদুরের মাধ্যমে রোগটি বিস্তার লাভ করে। আধা খাওয়া ফল ও খেজুরের রস যেগুলোতে সংক্রমিত বাদুর মুখ দিয়েছেল বা তার উপর প্রসাব করেছিল, তার মাধ্যমেই রোগটি বিস্তার লাভ করে বলে WHO এর সূত্র মতে জানা যায়। পরবর্তীতে রোগটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ে।লক্ষণঃ
ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়া ভাইরাসটি ৪-৪৫ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে। এরপর এটি এনসেফালাইটিস এর লক্ষন দেখায়। লক্ষণগুলো অনেকটা ইনফ্লুয়েন্জা জ্বরের মত। যেমনঃ- ১. জ্বর
- ২. প্রচন্ড মাথাব্যাথা
- ৩. পেশীতে ব্যাথা
- ৪. বমি বমি ভাব
- ৫. আলো সহ্য করতে না পারা
- - মাথা ঝিমঝিম করা (dizziness)
- - ঘুমঘুমভাব (drowsiness)
- - জাগ্রত/সচেতন অবস্থার পরিবর্তন (altered consciousness) সহ অন্যন্য নিউরোলজিক্যাল সাইন।
ডায়াগনোসিসঃ
- * serum neutralization
- * enzyme-linked immunosorbent assay (ELISA)
- * polymerase chain reaction (PCR) assay
- * immunofluorescence assay
- * virus isolation by cell culture.
চিকিৎসাঃ
সরাসরি নিপাহ ভাইরাস নিরাময়ে কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। রোগের লক্ষণ বিবেচনা করে চিকিৎসকগণ সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকেন।মৃত্যুর হারঃ
এলাকা ভেদে মৃত্যুর হার 40% থেকে 75% বলে WHO এর তথ্যসূত্রে জানা যায়।প্রতিরোধক ব্যবস্থাঃ
যেহেতু এই ভাইরাসের জন্য কোনো প্রতিষেধক টিকা নেই, তাই প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে-- ১. বাদুর থেকে প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রেঃ পাখি দ্বারা আধা খাওয়া ফল ও খেজুরের কাঁচা রস পান না করার জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরী করতে হবে।
- ২. মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো প্রতিরোধেঃ আক্রান্ত মানুষের সরাসরি ফিজিক্যাল কন্টাক্ট এড়িয়ে চলতে হবে। রোগীদের ব্যবস্থাপনায় ডাক্তারদের/স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
- ৩. ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোবার ব্যবস্থা করতে হবে যেন হাতের মাধ্যমে ভাইরাসটি না ছড়ায়।
বিস্তারিতঃ WHO এর ওয়েবসাইট
0 comments:
Post a Comment