রান্নার ব্যবহার শুরু হয়েছিল ১৯ লাখ বছর আগে!

মানুষের পূর্বপুরুষ সম্ভবত প্রায় ১৯ লাখ বছর আগেই জেনে গিয়েছিল রান্না করে খাওয়ার রহস্য। মানব জাতির খুব কাছের পূর্বপুরুষ ‘হোমো ইরেকটাস’ প্রজাতির দাঁতের জীবাশ্ম গবেষণা শেষে এ দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।

গবেষকরা জানিয়েছেন, আফ্রিকা থেকে আধুনিক মানুষ সারা বিশ্বে প্রথমবারের মতো ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগেই ‘হোমো ইরেকটাস’ প্রজাতির আদিমানবরা আগুনের ব্যবহার জানত, রান্না করে খেত খাদ্যশস্য কিংবা শিকার করা মাংস। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন ১৯ লাখ বছর আগের ‘হোমো ইরেকটাসরাই’ প্রথম সমতল মুখের মোটা ভ্রুবিশিষ্ট আদিমানব।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদবিশারদ জীববিজ্ঞানী ক্রিস অর্গান মনে করেন, রান্না করা খাদ্যগ্রহণ যেকোনো প্রাণিকূলের জন্য খুব বড় ঘটনা। কেননা, এর ফলে অধিক পরিমাণ খাদ্যপ্রাণের নির্যাস সহজেই বেরিয়ে আসে, খাদ্য চিবাতে হয় খুব কম এবং দাঁতের ও চোয়ালের ওপর চাপ পড়ে খুব সামান্য। রান্নার ফলে আপাত অপাচ্য খাবারও হজম হয় খুব সহজেই এবং আমিষের প্রাচুর্যও ঘটে অনেক বেশি। আধুনিক মানুষ শারীরবৃত্তিকভাবে রান্না করা খাবারের সঙ্গে নিবিড়ভাবে খাপ-খাওয়ানো।

বিজ্ঞানীরা এর আগে রান্নার সর্বশেষ প্রামাণিক উপাত্ত খুঁজে পেয়েছেন প্রায় চার লাখ বছরের প্রাচীন ইসরায়েলে। গত বছর ডিসেম্বরে ইসরায়েলের গবেষকরা দাবি করেছেন তারা চার লাখ বছরের পুরনো মানুষের আদি প্রজাতির আটটি দাঁত খুঁজে পেয়েছেন। এসব প্রত্নতাত্তি্বকরা মনে করছেন, হোমো স্যাপিয়েন্স তথা আধুনিক মানুষের দিকে বিবর্তনের পথে যেসব জীবাশ্ম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে প্লেইস্টোসিন যুগের মধ্যবর্তী সময়ের এ জীবাশ্ম দাঁতগুলো সবচেয়ে প্রাচীন। প্লেইস্টোসিন হলো প্রায় ২৪ লাখ বছর আগের এক ভূতাত্তি্বক, আবহাওয়ানির্ভর যুগ। বিবর্তন মতবাদ অনুসারে প্লায়োসিন-প্লেইস্টোসিন যুগ থেকেই মানব জাতির উদ্ভব। গবেষকরা একই সঙ্গে চকমকি পাথর, আগুনের ব্যবহার, শিকারকাজ এবং পাথুরে অস্ত্র তৈরির নির্দশন খুঁজে পেয়েছেন। এর আগে এখানে সাত লাখ ৯০ হাজার বছর আগের প্রাচীন ক্যাম্পফায়ারের নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষণায় গবেষকরা মানবজাতির তিনটি প্রজাতি_হোমো ইরেকটাস, নিয়ানডার্টাল ও হোমো স্যাপিয়েন্স (আধুনিক মানুষ) শাখার দাঁতের আকার ও খাবার গ্রহণের সময়কাল গবেষণা করে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

সূত্র : গার্ডিয়ান।

কালের কন্ঠ