সেই আমলেও হৃদরোগ ছিল!

হৃদরোগকে আধুনিক যুগের রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গবেষকদের দাবি; মানসিক চাপ, ধূমপান, মদ্যপান ও চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে এ রোগ হয়। তবে মিসরের এক প্রিন্সেসের মমি পরীক্ষার পর সে ধারণা পাল্টাতে হচ্ছে। কারণ, আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে আধুনিক জীবনযাত্রা থেকে অনেক দূরে থাকার পরও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গিয়েছিলেন তিনি। তাই ভেজালমুক্ত সুষম খাবার খাওয়া ও দুশ্চিন্তাহীন নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনের পরও যে কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকরা।

ওই প্রিন্সেসের নাম আহমোস মারিয়েত আমোন। খ্রিস্টপূর্ব ১৫৮০ অব্দে মিসরের লুঙ্রে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বয়স ৪০-এর কোটায় পেঁৗছার পর তাঁর মৃত্যু হয়। মমি স্ক্যান করে আমোনের হৃৎপিণ্ড থেকে মস্তিষ্ক, পাকস্থলি ও পায়ের দিকে যাওয়া ধমনিতে বড় ধরনের ব্লক পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘আমোন যদি এ যুগের হতেন, তাহলে তাঁর বাইপাস সার্জারি করতে হতো।’

আধুনিক জীবনযাত্রা শুরুর আগেও যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ছিল, আমোনের মমি তারই প্রমাণ বহন করছে_এমন দাবি গবেষকদের। কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এ গবেষণা চালাচ্ছে। মিসরের জাতীয় প্রত্নতাত্তি্বক জাদুঘরে আমোনসহ ৫২ জনের মমি পরীক্ষা করছেন তাঁরা। চিকিৎসকরা জানান, মমিগুলোর প্রায় অর্ধেকেরই ধমনি শক্ত হয়ে যাওয়ার প্রমাণ রয়েছে।

মমি নিয়ে গবেষণারতদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর গ্রেগরি থমাস বলেন, ‘সে সময় বিদ্যুৎ বা গ্যাস ছিল না। ফলে আমোনকে মোটামুটি সক্রিয় জীবন কাটাতে হয়েছে। তাঁর খাবারও আমাদের মতো চর্বিবহুল ছিল না এবং তখন তামাকও পাওয়া যেত না। নীল নদের তীরে উৎপন্ন তরতাজা ফল, সবজি ছাড়াও প্রচুর মাছ খেতেন তিনি। তার পরও তাঁর হৃদযন্ত্র ব্লক হয়েছে।’ গবেষকদের দাবি, আমোনের মমি পরীক্ষার পর এটা মানতেই হচ্ছে, আজও হৃদরোগের সব কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিছু বিষয় এখনো অজানাই রয়ে গেছে। আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে_এমন খাওয়া-দাওয়া বা কাজকর্ম এড়িয়ে চলার পরও মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।

তাই বলে এ রোগকে দূরে রাখতে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান যেসব সুপারিশ করে তাকে খাটো করে দেখার কোনো উপায় নেই বলেও উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র : বিবিসি।