কিন্তু সময় বদলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও সমাজে এসেছে আমূল পরিবর্তন। আরব বিশ্বের সাম্প্রতিক গণজাগরণ পশ্চিমাদের ধারণাকে পুরোপুরি ভ্রান্ত প্রমাণিত করেছে।
তিউনিসিয়া, মিসর, সিরিয়া, ইরান, ইয়েমেন, ওমান প্রভৃতি দেশের রাজপথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই বলে দেয় পরিস্থিতি আর আগের মতো নেই। মধ্যপ্রাচ্য বিপ্লবের এই নারীরা পশ্চিমাদের কল্পিত সেই ‘বাধ্যগত’ নারী নয়। এঁরা শিক্ষিত, সচেতন, গণতন্ত্রকামী ও স্বাধীনচেতা। তাঁরা কেবল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যোগই দিচ্ছেন না, সমাজ পরিবর্তনেও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিউনিসিয়া ও মিসরের সফল সরকারবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্র ছিল এ নারীরা। তাঁরা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, পরিকল্পনা করেছেন, আন্দোলন সংগঠিত করেছেন। আবার কেউ কেউ স্বেচ্ছা শ্রম দিয়ে আহতদের সেবা দিয়েছেন।
মিসরের অনেক নারী তাহরির স্কোয়ার থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে তা সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। মিসরের লেইল জাহরা মোরতাদা নামের এক ব্লগার তো রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বকে মিসরের ঘটনার ‘লাইভ’ তথ্য দিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষকও ওই বিপ্লবে নারীদের অবদানকে গুরুত্বসহ দেখছেন।
সবাই জানে, নারীর পরিবর্তনের সঙ্গে সমাজ-সভ্যতার পরিবর্তন সম্পর্কযুক্ত। মধ্যপ্রাচ্যেও ঘটছে তাই। সেখানকার নারীদের মধ্যে আমূল পরিবর্তন এসেছে।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। মধ্যপ্রাচ্যে একটা সময়ে কেবল কিছুসংখ্যক সম্ভ্রান্ত নারীই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেত। কিন্তু এখন সে রীতি ভেঙে পড়েছে। মিসরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্ধেকের মতো নারী শিক্ষার্থী আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা তাঁদের সচেতন করছে। তাঁরা ক্ষমতার ব্যবহারের কৌশল সম্পর্কে জানতে পারছেন। বেরিয়ে আসছে পুরোনো ধ্যান-ধারণা থেকে।
কেউ যখন শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকে, তখনই তাঁকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু শিক্ষা যখন তাঁদেরকে আলোকিত করে, তখন তাঁদের মধ্যে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ধারণা তীব্র হয়ে ওঠে। আরব বিশ্বের নারীর ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। শিক্ষার আলো তাঁদের চেতনার কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। যার প্রতিফলন—সাম্প্রতিক সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ। ওয়েবসাইট অবলম্বনে।
0 comments:
Post a Comment